১১ই আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , শুক্রবার , ২৬শে সেপ্টেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
Breaking New

জৌলুসে বাড়ছে পুজোর, কিন্তু তলানিতে পুজো সংখ্যার আকর্ষণ

নিউজ ডেস্ক: বাঙালি শ্রেষ্ঠ উৎসব শারদ উৎসব বা দুর্গাপুজো।শারদ উৎসবকে কেন্দ্র করে কুমোরটুলিতে অসংখ্য প্রতিমা গড়া, পেল্লাই প্যান্ডেল তৈরি অথবা চোখ ধাঁধানো আলোকসজ্জার বহর আজও বিদ্যমান।এসবের বহর ক্রমশ বাড়ছে।সেইসঙ্গে পুজোকে কেন্দ্র করে নতুন জামাকাপড় কেনাকাটা বা খানাপিনার বহর ক্রমশ বাড়ছে।তবে শারদ উৎসবকে কেন্দ্র করে জৌলুস ঊর্ধ্বমুখী হলেও, গঙ্গারামপুর শহর তথা জেলা জুড়ে পুজো সংখ্যা প্রকাশ বা পুজো সংখ্যা পড়বার চল ক্রমশ কমে আসছে।

একসময় বাঙালি মধ্যবিত্ত, নীম্ন মধ্যবিত্ত বাড়িতে পুজোর সময় নামী পুজো সংখ্যার সঙ্গে নিজস্ব শহর বা জেলা কেন্দ্রীক বিভিন্ন পুজো সংখ্যা কেনা এবং পড়া এক প্রকার বাধ্যতামূলক ছিল। বিশেষত শিশু কিশোরদের জন্য উৎকৃষ্ট বিভিন্ন পুজো সংখ্যা প্রায় বাড়ি বাড়ি পড়বার চলছিল। তবে ক্রমবর্ধমান প্রযুক্তির নির্ভর বিনোদনের যুগে, বইপ্রীতি ক্রমশ হ্রাস পাবার সঙ্গে সঙ্গে পুজোসংখ্যার কদর স্বাভাবিক ভাবে অনেকটাই কমেছে। আগে গঙ্গারামপুর শহর থেকে অক্টোবর, পীলসূচ, মনোভূমি, দেবীকোট দর্পণ সহ বিভিন্ন পুজো সংখ্যা বের হতো। বালুরঘাট শহর এবং বুনিয়াদপুর থেকেও অনেক পুজো সংখ্যা বের হতো। এখন অনেকটাই কমেছে। আর এনিয়ে চরম আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন বর্তমান কবি সাহিত্যিক তথা সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদকেরা।

এবিষয়ে সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক গোবিন্দ পাল জানান, একসময় দুর্গাপুজো মানে নতুন জামা কাপড় কেনা, প্যান্ডেল হপিং,বাহারি খাবার,সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে বুঝতাম। সেইসঙ্গে প্রায় বাধ্যতামূলকভাবে পুজো সংখ্যা পড়বার একটা চলছিল। আমরা স্থানীয় কবি সাহিত্যিকরা মিলে প্রচন্ড পরিশ্রম করে গঙ্গারামপুরে থেকে পুজো সংখ্যা বের করতাম । দক্ষিণ দিনাজপুর জেলাজুড়ে বিভিন্ন স্বাদের পুজো সংখ্যা প্রকাশ হত। রাজ্যস্তরের বিভিন্ন পুজোসংখ্যার আলাদা উন্মাদনা ছিল। এখন আনুষ্ঠানিকতা, জাঁকজমকতা সবই রয়েছে, তবে পড়বার অভ্যাস তলানিতে নামবার সঙ্গে সঙ্গে পুজো সংখ্যার আকর্ষণ ক্রমশ কমে আসছে।

এবিষয়ে প্রবীণ কবি তথা সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক সুবোধ দে জানান, আমরা ছেলেবেলা থেকে পুজো সংখ্যার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। বিশেষ বিশেষ সাহিত্যিকদের বিশেষ লেখা পড়বার জন্য আমাদের আগ্রহের শেষ ছিল না ।পুজো সংখ্যা হাতে পাওয়া মাত্র গোগ্রাসে গিলতাম। এখনও সেই অভ্যাস রয়েছে।সেই সময় প্রায় প্রতিটি বাড়িতে পুজোসংখ্যা আসতো। বিশেষত বাচ্চাদের মধ্যে পুজো সংখ্যা পড়বার একটা প্রবল চলছিল। এছাড়াও জেলা কেন্দ্রিক যে সমস্ত পুজো সংখ্যা বেরহতো, সেখানে আমরা লেখা দিতাম এবং সেসব পড়তাম।। আগে গঙ্গারামপুর শহর থেকে ছয় সাতটি পুজো সংখ্যা প্রকাশ হত।এখন দু’একটি পুজো সংখ্যা বের হচ্ছে। আমরা নিজেরাও দীর্ঘদিন ধরে নানান প্রতিকূলতার মধ্যদিয়ে পুজো সংখ্যা বের করছি। তবে আগের থেকে পাঠক অনেক কমে যাওয়ার ফলে পুজো সংখ্যার উন্মদনা অনেকটাই কমে গিয়েছে। আগামী দিনে পুজো সংখ্যার ভবিষ্যৎ কি হবে, এনিয়ে সত্যিই আমরা উদ্বেগ রয়েছি।

এবিষয়ে শিক্ষিকা ডলি ভট্টাচার্য গুহ জানান, আগে বাড়িতে বড় এবং ছোটদের জন্য বিভিন্ন পুজো সংখ্যা আসতো। এখন অনেকটাই কমেছে। এখন বিশেষ দু-একটি পুজো সংখ্যায় নেওয়া হয় ।তবে কর্মব্যস্ততার জন্য সব সময় সেই পুজো সংখ্যা পড়ে শেষ করা হয় না। আগে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে পুজো কেন্দ্রিক আলোচনাতে পুজো সংখ্যা এবং তার বিশেষ বিশেষ লেখা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হত ।এখন আর সেসব আলোচনা প্রায় হয় না। মূলত আমাদের পড়বার অভ্যাস অনেকটাই কমে গিয়েছে, বিকল্প বিনোদন মানুষের হাতে চলে এসেছে বলেই, পুজো সংখ্যার প্রতি সাধারন মানুষের আকর্ষণ অনেকটাই কমে এসেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *